মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত রুবেল হত্যা মামলার পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ওমর আলী (৬৬) এর শেষ রক্ষা হলো না। শনিবার(২৬ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে ১ টার দিকে ঢাকা জেলার সাভার থানার বলিয়ারপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে সিপিসি-৩, র‌্যাব-৪ মানিকগঞ্জ। রবিবার(২৭ আগস্ট) সকাল ৯ টায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে র‌্যাব-৪ মানিকগঞ্জ এর কোম্পানী কমান্ডার লে.কমান্ডার মোহাম্মদ.আরিফ হোসেন এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন। গ্রেফতারকৃত-ওমর আলী উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের গাজিন্দা গ্রামের মৃত.সোলায়মানের ছেলে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানাযায়, গ্রেফতার-কৃত আসামী ওমর আলী ও ভিকটিম রুবেল একই এলাকায় বসবাস করতো। ভিকটিম রুবেলের বাবা সামছুল হকের সাথে পূর্ব থেকেই জমি-জমা নিয়ে ওমর আলীর বিরোধ চলে আসছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় ২৪ এপ্রিল ২০০১ সনে সকাল সোয়া ১০ টার দিকে জমির চাষাবাদকে কেন্দ্র করে ভিকটিম রুবেল ও ভিকটিমের বাবা সামছুল হকের সাথে আসামী ওমর আলীর কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। সে ঘটনায় আসামী ওমর আলী সামান্য আঘাত প্রাপ্ত হয়। সেই বিরোধের জের ধরে তার ২দিন পর ২৬ এপ্রিল ২০০১ সনে সামছুল হকের ছেলে রুবেলকে জনৈক রওশন আলীর মাঠে একা পেয়ে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আসামী ওমর আলী ও তার সহযোগী ইব্রাহিম, রাজ্জাক, হানিফ-সহ অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন মিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ভিকটিম রুবেলকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে লাশ জনৈক রওশন আলীর মাঠের দক্ষিণ পাশের নালায় বস্তা বেধে ফেলে দিয়ে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। ভিকটিমের বাবা সামছুল হক তার ছেলেকে কোথায় খুঁজে না পেয়ে সিংগাইর থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়রী করেন।

পরবর্তীতে ভিকটিমের বাবা জনৈক সামছুল হক লোক-মারফত জানতে পারে যে, সিংগাইর থানাধীন ধল্লা ইউনিয়নের গাজিন্দা সাকিনস্থ জনৈক রওশন আলীর মাঠের দক্ষিণ পাশের নালার মধ্যে বস্তা ভর্তি একটি লাশ পাওয়া গেছে।

উক্ত খবর পেয়ে ভিকটিমের বাবা সামছুল হক ঘটনাস্থলে গিয়ে উক্ত লাশটি তার ছেলে রুবেল এর বলে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন সিংগাইর থানা পুলিশকে খবর দিলে সিংগাইর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি নালা হতে উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা সামছুল হক মিয়া বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় বিবাদী ওমর আলী ও তার সহযোগী ইব্রাহিম, রাজ্জাক, হানিফ-সহ অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনের এর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলা হওয়ার পর আসামী ওমর আলী ও তার সহযোগী হত্যাকারী ইব্রাহিম, রাজ্জাক এবং হানিফকে সিংগাইর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা ১৭ মাস কারাবাস শেষে জামিনে মুক্তি পায়। এর মধ্যে ওমর আলী জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। অত্র মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় ওমর আলী, ইব্রাহিম, রাজ্জাক এবং হানিফগণদেরকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। পরবর্তীতে চার্জশীটের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম রুবেল হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী ওমর আলীকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন এবং অপর আসামী ইব্রাহিম, রাজ্জাক এবং হানিফকে মামলা থেকে খালাশ প্রদান করেন। পলাতক আসামী ওমর আলী মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গত ২০ বছর যাবৎ পলাতক ছিল।

আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরোও জানা যায় যে, আসামী ১৯৫৭ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানাধীন গাজিন্দা এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। তিনি গাজিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে আসামী বিবাহিত এবং বর্তমানে তার পরিবারের স্ত্রীসহ তিনটি ছেলে এবং একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

এ ব্যাপারে সিংগাইর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীকে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।