১৪ দলীয় জোট ভাঙা হয়নি। তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আসন বণ্টনের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘জোটের মধ্যে যদি কোনো আসন ভাগাভাগির বিষয় হয় সেটার এখনো সময় আছে। আগে মনোনয়নপত্র জমা দিক। ইলেক্টেবল নয় এমন প্রার্থী মনোনয়ন আমরা কেন দেব? যাকে টেনে তোলা যাবে না, ক্রেন দিয়ে তোলা যাবে না, এমন প্রার্থী কেন দেব?’

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন তিনি।

৭ জানুয়ারিকে ভোটের তারিখ ধরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর।

নির্বাচনে দলের প্রার্থী দিতে চার দিন ধরে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। পরে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ২৯৮ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। গত রোববার ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষ থেকে ২৯৮ আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। সেখানে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা ও মিরপুর) এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ (বন্দর উপজেলা ও নারায়ণগঞ্জ সদরের অংশ) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসন কুষ্টিয়া-২ এ আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা না করলেও ১৪ দলীয় জোটের আরেক শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের আসন (ঢাকা–৮) এবার এক নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ওই আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় শরিকরা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ১৪ দলীয় জোট নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন যারা করবে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। জোটের মধ্যে যদি কোনো আসন ভাগাভাগির বিষয় হয় সেটার এখনো সময় আছে। আগে মনোনয়নপত্র জমা দিক। ইলেক্টেবল নয় এমন প্রার্থী মনোনয়ন আমরা কেন দেব? যাকে টেনে তোলা যাবে না, ক্রেন দিয়ে তোলা যাবে না, এমন প্রার্থী কেন দেব?

‘সেখানে তাদের বিভ্রান্তি রয়েছে কি না আমি জানি না। আমি ভুল না। আমি যেটা বলেছি, সেটা হলো মনোনয়নপত্র জমা দিক। ১৭ তারিখ পর্যন্ত সময় আছে। সে সময়ের মধ্যে কোন এডজাস্টমেন্ট, নিজেদের মধ্যে আসন বণ্টন প্রশ্নে সুযোগ আছে যথেষ্ট। সে সময়ের মধ্যে আমরা করতে পারি। জোট তো ভেঙে দেই নাই, জোট আছে।’-বলেন সেতুমন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘চমক দেখতে ইলেকশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। চমক এর মধ্যে আছে জাতীয় পার্টি ২৯৩টা সিটে কনটেস্ট করবে। তৃণমূল বিএনপি তিন শ সিটে কনটেস্ট করবে এগুলো তো চমক। এগুলো হবে আমরা কেউ ভেবেছিলাম? শুনতে পাচ্ছি বিএনপি নেতা কারাগার থেকে বের হয়েছেন, তিনিও হয়তো ইলেকশন করতে পারেন। শোনা কথা।’

সুষ্ঠু ভোট করতে সরকার বদ্ধপরিকর মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের যা দরকার তাই হচ্ছে। আমরা একটা ইলেকশন করতে চাই, সুন্দর ইলেকশন করতে চাই। সুষ্ঠু, অবাধ একটা ইলেকশন করতে চাই। জনগণের অংশগ্রহণে আগামীতে একটা ভালো নির্বাচন হবে। ভালো টার্নআউটও হবে। কারণ মহিলাদের যে জাগরণ দেখা যাচ্ছে, উৎসাহ, উদ্দীপনা সারাদেশে। ভোটারবিহীন নির্বাচন আর বলা যাবে না। উন্নত দেশের চেয়ে কোনো অংশে কম হবে না টার্নআউট।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য না কি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কৌশলটার পরিণতি যখন আসবে তখন আপনি বুঝতে পারবেন। নিশ্চয় আমাদের পরিকল্পনা আছে। সেটা ভেবেই আমরা করেছি। তবে ঢালাওভাবে আমরা করব না। সময়মতো এটা জানবেন। ঢালাওভাবে আমরা এটা চালু করব না।’

এরশাদপত্নী রওশন এরশাদকে নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (রওশন এরশাদ) ব্যক্তিগতভাবে এই ইলেকশন নাও করতে পারেন। কিন্তু তার দল তো নির্বাচন করছে। দলের ২৯৩ জন নমিনেশন জমা দিয়েছে। এটাতো জাতীয় পার্টির কোনো ব্যাপার না। পার্সোনালি রওশন এরশাদ ইলেকশন নাও করতে পারেন। শারীরিক কারণেও নাও করতে পারেন। আমি আসলে ঠিকভাবে জানি না। তিনি এখনো সরকারের পাশে আছেন। তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় এডমায়ারার।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ-বিপক্ষে থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে পিটার হাসের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠাতে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। নির্বাচন নিয়ে অনেক বিভ্রান্তির পরও শতাধিক পর্যবেক্ষক আসবেন।