সিরাজগঞ্জে অনুমোদনপ্রাপ্ত সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা ৫ হাজার হলেও অবৈধভাবে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ হাজারেরও বেশি সিএনজি অটোরিকশা। এসব অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা জেলার আঞ্চলিক রুটসহ বগুড়া-নগরবাড়ী ও ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে নিয়মিত চাঁদার বিনিময়ে চলছে। এর মধ্যে চার হাজার সিএনজি অটোরিকশা গত দেড় দশকে নিবন্ধন করেছে। বাকি ১০ হাজারেরও বেশি অনিবন্ধিত বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এতে সরকার অন্তত ২০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

নতুন অটোরিকশার মধ্যে সিংহভাগেরই নিবন্ধন নেই। পুরোনোগুলোর অধিকাংশের ফিটনেস নেই। এসব অনিবন্ধিত ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে দাপিয়ে বেড়ালেও প্রশাসনের নেই কোনো অভিযান। ক্ষুদ্র এসব যানবাহনের জন্য নির্ধারিত স্থানে কোনো স্ট্যান্ডও নেই।

সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন, রেলগেট, কাঠেরপুল, সয়দাবাদ ও কড্ডা ছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কের পাশে অর্ধশত অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এসব স্ট্যান্ড থেকে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন চলাচল করছে হাজারো অটোরিকশা।

হরতাল-অবরোধের মধ্যে দূরপাল্লার বাস চলাচল সীমিত হওয়ার সুযোগে এসব যানবাহন চলছে বেশ দাপটের সঙ্গে। যদিও নিবন্ধিত চার হাজার অটোরিকশার মধ্যে দুই হাজারটির নম্বরপ্লেট বিআরটিএ অফিসে রয়েছে। এগুলো তোলেইনি মালিক-চালকরা। বাকি ১০ হাজার অনিবন্ধিত যানবাহন নিবন্ধিত হলে প্রায় ২০ কোটি টাকা রাজস্ব জমা হতো সরকারি কোষাগারে।

সদর উপজেলার সিএনজি অটোরিকশার চালক আলমগীর হোসেন জানান, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়েছে, নিবন্ধন আপাতত বন্ধ আছে। সেজন্য তারা বিআরটিএ অফিসে যাননি। কে চায় নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি চালাতে বা হয়রানির শিকার হতে?

সূত্র বলছে, ২০২২ সালের ২৯ জুন জেলা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সভায় সর্বশেষ ৫০০ সিএনজিচালিত থ্রি হুইলারের নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে আবেদনতো দূরের কথা, বিআরটিএ অফিসমুখীই হননি চালক ও মালিকরা।

নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে, এমন অপপ্রচার চালিয়ে চালকদের অফিসমুখী হতে দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি আরটিসির সদস্য সচিব ও বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আলতাব হোসেনের। তিনি বলেন, চালকদের লাইসেন্স নেই। অভিযান না থাকায় নিবন্ধন বা লাইসেন্স করায় আগ্রহও নেই। লাইসেন্সসহ ১০ হাজার অটোরিকশা নিবন্ধন হলে ২০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোটেম্পু ও হিউম্যান হলারের মালিক গ্রুপ এবং মালিক সমিতি যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। বাকিগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় স্থানীয়ভাবে। মালিক গ্রুপ বা সমিতিতে ৩ বা ৪ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে ভর্তি হয়ে চলাচল করায় নিবন্ধনে আগ্রহ থাকছে না চালক ও মালিকদের।

অভিযোগ রয়েছে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ টাকা হারে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি পৌরসভার টোল আদায় করা হচ্ছে। এতে চালক-মালিক, চেইন মাস্টার ও টোল আদায়কারীরা উপকৃত হলেও সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অটোরিকশা, অটোটেম্পু ও হিউম্যান হলার মালিক গ্রুপের সভাপতি হাসানুল হক ফাহিম মোল্লা বলেন, শুনেছি নিবন্ধন বন্ধ আছে। চালু হয়েছে কিনা, তা জানা নেই। একই কথা বলেন অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হামিদ।

তবে সিএনজি অটোরিকশা ও অটোটেম্পু মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, তিন-চার বছর নিবন্ধন বন্ধ থাকলেও ফের চালু হয়েছে। বিআরটিএ ‘অতিরিক্ত ফি’ দাবি করায় কেউ আগ্রহী হচ্ছেন না।

এদিকে নিবন্ধনের জন্য চালক-মালিকদের বিআরটিএমুখী করতে অভিযান চলছে বলে দাবি জেলা ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (অ্যাডমিন ও প্রসিকিউশন) আবু জাফরের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এক দিন আগেও ৩০টি অনিবন্ধিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে।
একই ধরনের কথা বললেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল। তিনি বলেন, নিবন্ধন ছাড়া অবৈধভাবে চলা অটোরিকশার বিরুদ্ধে ট্রাফিক ও জেলা পুলিশ প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও আরটিসির সভাপতি মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, পরিবহন খাতের কমিটির লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি তিনি দেখবেন।