হত্যার ২৪ ঘন্টার মধ্যে উদঘাটন হয়েছে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে ইজিবাইক চালক মানিক (২৪) হত্যার কারণ। মূলত ইজিবাইক ছিনতাই-ই ছিল এই হত্যার কারণ। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ওই দুই আসামি হলেন সদরের কালিয়া উত্তরপাড়ার মৃত বাবু শেখের ছেলে খোকন শেখ (২৩) ও একই এলাকার ছামাদ শেখের ছেলে সাদ্দাম শেখ (২১)।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি জুলহাজ উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওসি জানান, নিহত মানিক তিন-চার মাস আগে কিস্তিতে একটি ইজিবাইক কিনে ভাড়ায় চালাতেন। প্রতিদিনের মতো গত মঙ্গলবার দুপুরে এসে খাওয়া-দাওয়া শেষে মানিক ইজিবাইক নিয়ে বিকেলে ভাড়া অন্বেষণে বাড়ি থেকে বের হয়। ওইদিন রাত ১০টা পার হলেও মানিক বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের সদস্যরা তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে। কিন্তু তখন ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে মানিকের পরিবারের সদস্যরা বুধবার সকালে কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল উত্তরপাড়ার শীতল পাটি তৈরির একটি বেতের খেতে একজনের গলাকাটা লাশ পড়ে আছে এমন খবরে সেখানে পৌঁছে তারা নিশ্চিত হন লাশটি মানিকের। মানিককে হত্যা করে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা ইজিবাইক ও মুঠোফোন নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় মানিকের মা বাদী হয়ে কামারখন্দ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় মানিকের লাশ শনাক্তের পর তথ্য-প্রযুক্তি ও নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্ত করে বুধবার রাতভর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি খোকন শেখ ও সাদ্দাম শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আসামি খোকনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেলকুচি থানা এলাকা থেকে নিহত মানিকের ইজিবাইকটি উদ্ধার করা হয়।

ডিবি ওসি জুলহাস জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামি খোকন ও সাদ্দামকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, ইজিবাইক চালক নিহত মানিক তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামে বসবাস করে। নিহত মানিকের ইজিবাইক নতুন হওয়ায় আসামি খোকন, সাদ্দাম ও করিম (ছদ্মনাম) পরিকল্পনা করে যে, মানিকের ইজিবাইক ছিনতাই করে বিক্রি করে টাকা ভাগ করে নেবে। আসামিদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খোকন ও সাদ্দাম মানিকের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বিয়ের জন্য একটি মেয়ে দেখতে কামারখন্দ থানা এলাকায় যাওয়ার কথা বলে ও ইজিবাইক ভাড়া করার জন্য মোবাইল নম্বর নেয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যার দিকে আসামিরা নিহত মানিকসহ তার ইজিবাইকে করে তিনজন আসামি কামারখন্দ থানা এলাকার দিকে রওনা হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে গ্রেপ্তার আসামি সাদ্দাম প্রশ্রাবের কথা বলে ইজিবাইক থামাতে বলে। মানিক ইজিবাইক থামালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৩ আসামি মিলে তাদের মানিকের গলায় এন্ডিকাটার (ধারালো ছুরি) দিয়ে ইজিবাইক থেকে নিচে নামতে বলে। মানিক ইজিবাইক থেকে নিচে নামলে আসামিরা তাকে শীতল পাটি তৈরির বেত বাগানে নিয়ে এন্ডিকাটার দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। ইজিবাইকটি বেলকুচিতে আসামি খোকনের বোনাই আশরাফুলের বাড়ির সামনে রেখে যে যার বাড়িতে চলে যায়।

গ্র্রেপ্তার হওয়া আসামিরা নিজেদের সম্পৃক্ততাসহ ঘটনার বিষয়ে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামিদেরকে আদালতে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।