সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামাই-শ্বশুরের লড়াই দেখার অপেক্ষায় এলাকাবাসী। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন শ্বশুর আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। পাশাপাশি মেয়ের জামাই নুরুল ইসলাম সাজেদুলও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। দুজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

একই আসনে জামাই-শ্বশুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বেলকুচি-চৌহালীর ভোটার ও এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে জামাই-শ্বশুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নানা আলোচনা চলছে। তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন জামাই নুরুল ইসলাম সাজেদুল। তিনি দীর্ঘদিন হলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন।

আর শ্বশুর আব্দুল লতিফ বিশ্বাস আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলে জমা দেন। তিনি সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী।

এই আসনে জামাই-শ্বশুরের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। জামাই নুরুল ইসলাম সাজেদুল বেলকুচি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন।

আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ইউনিয়ন পরিষদ, বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর ২০১৪ সালে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান শিল্পপতি আব্দুল মজিদ মণ্ডল। ২০১৮ নির্বাচনে আব্দুল মজিদ মণ্ডলের ছেলে আব্দুল মমিন মণ্ডল এই আসনে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন। এবারও তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। জামাই-শ্বশুরের লড়াই দেখার অপেক্ষায় সিরাজগঞ্জবাসী।

এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম সাজেদুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। এ ছাড়া আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছি। আশা করি, এমপি হিসেবে আমি বিজয়ী হব।’

আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাপ দিচ্ছেন। তাঁরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।’

এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলার জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বেলকুচিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের অবদান রয়েছে। এলাকায় তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। তবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে তিনি নিশ্চিত বিজয়ী হতেন। কিন্তু যাঁরা দল করেন, তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে আমার মনে হয় না। জামাই-শ্বশুর প্রার্থী হওয়ায় অনেকেই দ্বিধাবিভক্তির মধ্যে পড়েছেন। দুজনে নির্বাচন করলে নৌকার প্রার্থী সুবিধা পাবেন।’

চৌহালী উপজেলার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জামাই-শ্বশুর যেকোনো একজন নির্বাচন করলে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এখানে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ আছে। একটি অংশ বর্তমান এমপির সঙ্গে, আরেকটি অংশ জামাই-শ্বশুরের সঙ্গে। তাঁদের নিজেদের মধ্যে ভোট কাটাকাটি হবে। এ জন্য নৌকা মার্কা সুবিধা পাবে।’