সিরাজগঞ্জের চককোবদাস পাড়ার মৃত আব্দুর রাজ্জাক আক্কার ছেলে মোঃ শরিফুল ইসলাম আলামিনের বিরুদ্ধে অন্যের জমি প্রতারনা করে বিক্রি এবং জমি বিক্রির নামে ভুয়া বায়না নামা করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের চককোবদাস পাড়ায় গ্রীণসিটি নামে প্লটবিক্রির একটি প্রকল্প রয়েছে। এই গ্রীণ সিটিতে মোট জমির মধ্যে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের এসবি ফজলুল হক রোড, (মিরপুর উত্তর বিড়লাকুঠির) বাসিন্দা মরহুম বাহাজ উদ্দিনের ছেলে এ.বি সিদ্দিক, তার ভাই আবুল খালেক এবং আব্দুল মালেক তিন ভাইয়ের মোট ১১৫শতক জমি রয়েছে।

গ্রীণসিটি প্রকল্প থেকে সিরাজগঞ্জ সদর সাব-সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে ২০১৯সালের ২৮ এপ্রিল মোঃ হারুনার রশিদ রাজু, মোছাঃ পাপিয়া খাতুন ও মোছাঃ শিখা খাতুনের পক্ষে নিযুক্তিও আম মোক্তার (স্বয়ং) উল্লেখ করে উপরোক্ত তিনজনের পক্ষে শরিফুল ইসলাম আলামিন দলিলে স্বাক্ষর করে জমি (ঊ-৫ নম্বর একটি প্লট) বিক্রি করে দেন। প্লটটি ক্রয় করেন সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশী গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে মোছাঃ শাকিলা ইসলাম। যার দলিল নং-৩৩২৬। পৌরসভার রানীগ্রাম মৌজার জেল.এল নং-১৫৪ হালে ১৫৩, সি.এস দাগ নং-২২৬১,এস.এ দাগ নং-২৬৬১, আরএস খতিয়ান নং-৬১৬ আর.এস দাগ নং-১৯১৪, রকম পুকুর.৫২একর কাতে রাস্তাসহ.০৩০০একর ভুমি যা এ.আর, এ গ্রীণ সিটি প্লট গুলোর মধ্যে ঊ-৫ এ অর্ন্তভূক্ত বলে মোঃ শরিফুল ইসলাম আলামিন কর্তৃক বিক্রি করা দলিলে উল্লেখ করা হয়।

কিন্ত জেএল নং-১৫৩, খারিজ খতিয়ান নং-১২৭৩ ও আগত আরএস খতিয়ান নং-৬১৬ থেকে দেখা যায় শরিফুল ইসলাম আলামিন মালিক সেজে যে জমি বিক্রি করেছে দলিলে উল্লেখিত এ.আর, এ গ্রীণ সিটির ঊ-৫ প্লটের জমির প্রকৃত মালিক সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের এসবি ফজলুল হক রোড, (মিরপুর উত্তর বিড়লাকুঠির) বাসিন্দা মরহুম বাহাজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ আব্দুল খালেক।খাজনা খারিজ এবং জমির দলিল সবই মোঃ আব্দুল খালেকের নামে রয়েছে।

শরিফুল ইসলাম আলামিন প্রকৃত পক্ষে প্রতারণা করে মোঃ আব্দুল খালেকের জমি নিজের জমি বলে মোছাঃ শাকিলা ইসলামের নিকট বিক্রি করেছেন। সম্প্রতি বিষয়টি প্রকৃত জমির মালিক মোঃ আব্দুল খালেকের ভাই এ.বি সিদ্দিকের নজরে আসলে প্রকৃত ঘটনা ফাঁস হয়। এবং ক্রেতা বিষয়টি জানার পরে হতাশ হয়ে পড়েছেন।

অন্যদিকে চক কোবদাস পাড়ার মৃত বিশা সেখের ছেলে খোসাল সেখের নিকট থেকে একই ভাবে এ.আর, এ গ্রীণ সিটির প্লট নং-খ-৫ এ ৩শতক জমি বিক্রির কথা বলে ৭লাখ টাকার ভুয়া বায়না নামা করে শরিফুল ইসলাম আলামিন। নিয়ম অনুযায়ী বায়না নামার সময় থেকে দলিল করে দেয়ার সময় পার হয়ে গেলেও এবং এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না আবার উল্লেখিত জমি দলিল করেও দিচ্ছেন না। বরং খোসাল সেখের নিকট থেকে ভূয়াবায়না নামা করে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

বায়না নামায় রানীগ্রাম মৌজার জে.এল নং-১৫৪ হালে ১৫৩, এস.এ খতিয়ান নং-৬৬৬, আরএস খতিয়ান নং-৪৭২, এস.এ দাগ নং-২৫২৪ ও আর.এস দাগ নং-১৯২২ কিন্ত সি.এস খতিয়ান নং-এবং সি.এস দাগ নং-উল্লেখ করা হয়নি। বায়না নামায় যে জমির কথা বলা হয়েছে প্রকৃত পক্ষে এ.আর, এ গ্রীণ সিটিতে সে ধরনের কোন জমি (প্লট) নেই বলে জানা গেছে। বায়নাকৃত প্লটটিও মোঃ আব্দুল খালেকের ভাই আব্দুল মালেকের বলে জানাগেছে। এখানেও শরিফুল ইসলাম আলামিন বড় ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এবিষয়ে উল্লাপাড়ার সাইফুল ইসলাম বলেন, এ.আর. এ গ্রীণ সিটির ঊ-৫ প্লট আলামিন আমার কাছে বিক্রি করেছে। দেই-দিচ্ছি করে আজও খারিজ করে দিতে পারেনি। আমি সম্প্রতি জানতে পেরেছি আলামিন আমার কাছে যে প্লট বিক্রি করেছে সেটা, (মিরপুর উত্তর বিড়লাকুঠির) বাসিন্দা আব্দুল খালেকের (চাচার)। যদি তাই হয় তবে আলামিন আমার সাথে প্রতারনা করেছে। আমিতো এ্যাতো প্যাচ বুঝি নাই। আমি কষ্ট করে জায়গা ক্রয় করেছি। ঘটনাটি জানার পরে আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমি হতাশ হয়ে পড়েছি। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে আমি জায়গার মালিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসবো। আমি আলামিনকে ছাড়বো না।আমি প্রতারক আলামিনের বিচার চাই।

এবিষয়ে খোসাল সেখ বলেন, এ.আর, এ গ্রীণ সিটির প্লট নং-খ-৫ এ তিনশতক জমি বিক্রির কথা বলে আলামিন আমার নিকট থেকে বায়না নামা করে জমির দাম বাবদ সাতলাখ টাকা নিয়েছে। আবার জমি দলিল করে দেয়ার নামে আরও ৭০হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্ত দেই-দিচ্ছি করে প্রায় চার বছর ধরে ঘুরাচ্ছে কিন্ত জমি দলিল করে দিচ্ছে না। আলামিন আমার সাথে চিটারি (প্রতারনা) করেছে।

আব্দুল খালেকের ভাই এ.বি সিদ্দিক বলেন, রানীগ্রাম মৌজার মধ্যে (গ্রীণসিটি)তে আমাদের ১১৫ শতক জমি রয়েছে। এ.আর, এ গ্রীণ সিটির যে জমির ঊ-৫ প্লট শরিফুল ইসলাম আলামিন মালিক সেজে বিক্রি করেছে তার প্রকৃত মালিক আমার ভাই আব্দুল খালেক। শরিফুল ইসলাম আলামিন এ.আর, এ গ্রীণ সিটির আমাদের বিপুল পরিমান জমি তার নিজের জমি বলে মানুষের মধ্যে প্রচার চালিয়ে তা বিক্রির জন্য দীর্ঘদিন থেকে পাঁয়তারা করছেন এবং মানুষকে প্রতারিত করছেন। প্রতারিত না হয়ে জমিক্রয় করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের গ্রীণসিটি থেকে জমি বায়না বা ক্রয় করার আগে বৈধ কাগজ পত্র দেখে প্রকৃত মালিকদের নিকট থেকে জমি বায়না বা ক্রয় করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এবিষয়ে মোঃ শরিফুল ইসলাম আলামিন কোন কথা বলতে রাজি হননি।