কম খরচ ও ভাল দাম পেয়ে আগাম খিরা চাষ করায় সিরাজগঞ্জে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। খিরা ও শর্সা চাষ বাম্পার ফলনে পাইকার ও বিক্রেতাদের ভিড়ে জমে উঠেছে খিরা ও শর্সার হাট। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে শত শত টন। প্রতিমণ খিরা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ ও শর্সা ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। যা উৎপাদন খরচের চেয়ে তিন গুণ বেশি। উপযোগী আবহওয়া থাকায় ও গাছের রোগবালাই না হওয়ায় প্রতিবছরই খিরা-শসা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন নতুন নতুন কৃষকেরা।

উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত এখানকার উৎপাদিত খিরা ও শসা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ক্ষীরার আড়ৎ থেকে ৬০ ও ৭০ টন ক্ষীরা ও শসা ঢাকা’সহ দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শীত মৌসুমে জেলায় খিরা ৩১৪ হেক্টর ও শসা ৩৯৩ চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় খিরা ১০ ও শাসা ২৫, কামারখন্দে খিরা ১১ ও শসা ১২, তাড়াশে খিরা ২২০ ও শসা ৭, কাজিপুরে শাসা ১০, চৌহালীতে খিরা ৫ ও শসা ১৫, উল্লাপাড়ায় খিরা ৫০ ও শসা ৩০০, শাহজাপুরে খিরা ৫ ও শসা ১৫, বেলকুচিতে খিরা ১ ও শসা ১, রায়গঞ্জে খিরা ১২ ও শসা ৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) উল্লাপাড়ার কয়ড়া চরপাড়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক কৃষাণীরা খিরা ও শসা তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা খিরা ও শসা জমির ভিতরে বস্তায় ভরছেন। দূর-দূরান্তের পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা জমি থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, গত ১ মাস ধরে কৃষকরা জমি থেকে আগাম খিরা ও শসা তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। এই কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের চরবর্দ্ধনগাছা ও চাকশা আড়তে খিরা কেনাবেচা শুরু হয়েছে। তবে বিক্রির জন্য কৃষকদের দিতে হয় না কোনো খাজনা।

চাষিরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ক্ষীরা ও শসা চাষ করতে প্রায় ১৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা থেকে উৎপাদিত ক্ষীরা বিক্রি হয় ২৭ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এ আবাদে পোকা-মাকড়ের ঝামেলা কম, তাই কৃষকের আগ্রহ বেশি।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর আগাম খিরা ও শসা চাষাবাদ হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বন্যার পানি নেমে যাবার পর পরই উঁচু জমিতে কৃষকরা এ চাষাবাদ করেন। অল্প খরচে ঝামেলাবিহীন এই চাষাবাদ করে কৃষকরা বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করে থাকেন। দাম ভাল পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (উপ-পরিচালক) বাবলু কুমার সূত্রধর জানান, সিরাজগঞ্জে যেকোন শস্য চাষের জন্য উপযোগী। শীত মৌসুমে জেলায় ৭০৭ হেক্টর জমিতে খিরা ও শসা চাষ হয়েছে। সার্বক্ষণিক উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে। ভালো ফলন হওয়ায় চাষাবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা। সামনে আরও বেশি আবাদ হবে বলে আশাবাদী।