চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মাঠ থেকে আমন ধান কাটা শেষ। এখন দ্রুত জমি পরিষ্কার করে সাদা সোনা খ্যাত ‘রসুন’ চাষ শুরু করেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। সোনালি স্বপ্নে বিভোর কৃষকদের সঙ্গে মাঠে রসুন বোনার কাজে যোগ দিয়েছেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। চোখে-মুখে সুন্দর ভবিষ্যতের স্পষ্ট ছাপ নিয়ে মনোযোগী হয়ে কাজ করছেন তারা। জমি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই বীজ বোনার কাজ সম্পন্ন করতে হবে তাদের। অন্যথায় চাষের উপযোগিতা হারাবে জমি। ফলে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষক-কৃষাণি ও তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, চাষ করা রসুনের ন্যায্য মূল্য না পেলেও চলতি বছর কৃষি উপকরণের দাম বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি বছর তাড়াশ উপজেলায় রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭৫ হেক্টর জমি। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৩০৫ হেক্টর। এরমধ্যে ‘বিনাহালে’ চাষ হয়েছে ২৭০ হেক্টর জমি। তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের চারটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রসুন চাষকে ঘিরে কর্মমুখর হয়ে উঠেছে কৃষক। মাঠে কাজ করছে তাদের পরিবারের সদস্য, নিয়োগকরা নারী শ্রমিক। বাদ যায়নি পরিবারের কিশোর-কিশোরী সদস্যরা। তারাও কাজ করছে মাঠে।

কৃষক মিঠু আহমেদ জানান, কৃষি উপকরণ বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, নিড়ানী খরচ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারনে গত বছরের তুলনায় এবছর রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের চরহামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, এবছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর চাষে খরচ বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিন্নাবাড়ি গ্রামের কৃষক ইমান আলী।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, চলনবিল অঞ্চলে বিগত দুই দশক ধরে ‘বিনাহালে’ রসুনের আবাদ করে কৃষকরা অধিক লাভবান হয়েছেন। ফলে ‘বিনাহাল’ পদ্ধতিতে রসুনচাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চলনবিলের তাড়াশ, গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও চাটমোহরসহ অনেক উপজেলায়।

চাষ পদ্ধতি:-
আমন ধান কাটার এক দুই দিনের মধ্যে জমি থেকে ধানের খড় তুলে জমি প্রস্তুত করতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক দিয়ে কাদার ওপর রসুনের একটি করে কোয়া রোপণ করতে হয়। রোপণকৃত রসুনের খেত ধানের খড় বা কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। ঢেকে দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে রসুনের চারা গজায়।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রতিবিঘা জমিতে ৩০-৪০ মন হারে রসুন উৎপাদন হয়। খরচ বাদ দিয়েও কৃষকদের অনেক লাভ হয় বলে জানান তিনি।