ঢাকার দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নের বাহ্রা বাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে মোটা অংকের ফি আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, চার দিনের নোটিশে ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই পরীক্ষার ফি বাবদ পাঁচ’শ পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে ছয়’শ টাকা করে ফি নেয়া হয়েছে।

এছাড়া পরীক্ষার ফি না দিলে এবং পরীক্ষায় অংশ না নিলে প্রতি বিষয়ে এক হাজার করে টাকা জরিমানা দিতে হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও এক দিনেই ১ম ও ২য় পত্র পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নের ওপর জোর দিতে চলতি বছর থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাউশি। তবে ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে বছরে দুটি পরীক্ষা নিতে পারবে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে ফি আদায়ের অনুমোদন নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি শিক্ষার্থীর বেতন আদায়ের রশিদের ‘বিবিধ’ ঘরে ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষার বিভিন্ন উপকরণ সমুহ বাবদ নেয়া হয়েছে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে পাঁচ’শ ৫০ টাকা। ৮ম, ৯ম ও ১০ শ্রেণিতে নেওয়া হয়েছে ছয়’শ করে টাকা। ঐ বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত’শ। ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে প্রায় সাড়ে ছয়’শ শিক্ষার্থী।

বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় সাড়ে ছয়’শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মূল্যায়ন পরীক্ষার ফি বাবদ হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। যা শিক্ষানীতির বহির্ভূত। এবিষয়ে বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরোজ কুমার সরকারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার স্কুলের ভাল ফলাফল, শিক্ষকদের বেতন, লেখাপড়ার মান উন্নয়নের জন্য এই ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতেছি। সাথে এই পরীক্ষা নিতে কাগজ, প্রশ্নপত্র ছাপানো, পরীক্ষায় গার্ড, খাতা মূল্যায়নসহ না উপকরণের খরচ হিসেবে আমরা ফি ৫৫০ টাকা আদায় করেছি। ফি আদায় আইনসিদ্ধ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মৌখিক অনুমোদন আছে। তবে লিখিত অনুমোদন বা ফি আদায়ের অনুমোদন নেই। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই ফি আদায় করা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ সাখাওয়াত হোসেন নান্নুর মোবাইল নাম্বার চাইলে তিনি দেননি।

দোহার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রকিব হাসানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির জন্য কোনো ফি আদায় করার সুযোগ নেই। তবে মূল্যায়ন পরীক্ষার উপকরণের জন্য অল্প কিছু টাকা নিতে পারে। তবে পাঁচ’শ ৫০ টাকা আদায় করা যাবে না। ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণির বছরে দুইটি পরীক্ষার ফি নিতে পারবে। কিন্তু মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে ফি নেয়া যাবে না।

বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৫০ টাকা করে ফি আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছে জানতে পারলাম। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবাশ্বের আলম জানান, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে কোনো পরীক্ষা নেই। তবে মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে পারে সাথে উপকরণ সমুহ বাবদ একটা খরচ নিতে পারে। কিন্তু ৫৫০ টাকা নিতে পারে না। আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।