সারাদেশে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের তিনটি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরাই দলীয় মনোনয়ন পেলেও পরিতবর্তন এসেছে বাকি তিনটি আসনে। সিরাজগঞ্জের ৬টি আসনের তিনটি তেই অপরিবর্তিত রয়েছে নৌকার প্রার্থী। তবে চমক এসেছে সিরাজগঞ্জ ২, ৪ ও ৬ আসনে। তবে নতুন করে যাদের আনা হয়েছে তারাও কেও আগে এমপি ছিলেন নয়তো এমপি নির্বাচন করেছেন।

সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না’র স্থলে নৌকা দেওয়া হয়েছে সাবেক কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সম্পাদক ও বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সম্পাদক জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী কে। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে তানভীর ইমামের স্থলে নৌকা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি। এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে নৌকা পেয়েছেন বর্তমান এমপি মেরিনা জাহান কবিতার ভাই সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম। সিরাজগঞ্জ ২, ৪ ও ৬ নং আসনে নতুন মাঝি দিয়ে নৌকা চালাবেন ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ।

সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সদর আংশিক) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম এর ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা জাতীয় চার নেতার অন্যতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহিদ এম. মনসুর আলীর দৌহিত্র। জয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিম অংশ নিতে না পারায় তার পুত্র তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সেই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। নাসিমপুত্র জয় ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বাবাকে ফের আসনটি ছেড়ে দেন। সেই নির্বাচনে নাসিম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন। আর সর্বশেষ একাদশ নির্বাচনেও আসনটিতে জয়লাভ করেন মোহাম্মদ নাসিম। কিন্তু নাসিমের মৃত্যুর পর ফের তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় উপনির্বাচনে জিতে সংসদে আসেন।তানভির শাকিল জয় ১৯৭৪ সালের ১ আগস্ট এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা ইউনির্ভাসিটি ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। পরে আমেরিকার ভার্জিনিয়ার বিখ্যাত জর্জ ম্যাশন ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত, তাঁর স্ত্রী সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

প্রসঙ্গত, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১৫ জন, নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৫ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন একজন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিন জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নাসিমপুত্র তানভীর শাকিল জয় (নৌকা) পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৫ ভোট, বিএনপি মনোনীত মো. আব্দুল মজিদ (ধানের শীষ) পেয়েছিলেন ৪০ হাজার ৮১৪ ভোট। এরপর ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম (নৌকা) পেয়েছিলেন ৩ লাখ ২৪ হাজার ৪২৪ ভোট এবং বিএনপির রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা (ধানের শীষ) পেয়েছিলেন ১ হাজার ১১৮ ভোট এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আল আমিন সিরাজী (হাতপাখা) পেয়েছিলেন ৩২৭ ভোট।

সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী। তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি মোতাহার হোসেন তালুকদারের পুত্রবধু। এর আগে তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশ নিয়ে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী রুমানা মাহমুদের কাছে সেই নির্বাচনে ২১২১ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। তবে তার এই আসন ছাড়াও জেলা জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

তিনি ১৯৮৮ সাল থেকে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর বিএনপি জামাত জোট বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সকল কর্মসূচি পালন করেছেন। ঐ সময় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে অসংখ্যবার লাঠিপেটা টিয়ারসেল খেয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তার নেত্বত্বে সড়ক অবরোধ/রেল অবরোধসহ আন্দোলন করতে গিয়ে তিনিসহ অনেক জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তিনি সবুজ কানন স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষক হিসেবে প্রথমে স্কুলে পরে কলেজের প্রভাষক হিসেবে ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নিজ উদ্যোগে মোতাহার হোসেন তালুকদার হোমিও প্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঠশালা, জান্নাত আরা হেনরী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ, ইনস্টিটিউট অফ বায়ো সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজি ও হেনরী স্কলাস্টিকা স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ছাড়াও তিনি সোনালী ব্যাংক লিঃ এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৩ বছর। তিনি ব্যবসার সাথেও জড়িত এবং জেলা ও কেন্দ্রীয় চেম্বার অব কমার্সের সদস্য। ড. জান্নাত আরা হেনরী ১৯৭২ সালের ১৩ অক্টোবর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল হামিদ ভুঁইয়া, মাতা জাহানারা হামিদ। তিনি পোড়াবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। কান্দাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি পাশ করেন। কামারখন্দ হাজী কোরপ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৯৪ সালে এইচএসসি এবং ১৯৯৬ সালে বিএ পাশ করেন। পরবর্তীতে ২০০০ সালে বিএড কোর্স সমাপ্ত করেন। ২০০৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমএ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) পাশ করেন। পাশাপাশি তিনি একজন সঙ্গগীত শিল্পী। জেলা পর্যায়ে রবীন্দ্র সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বরাবরই শীর্ষস্থান দখল করেছেন। লালনগীতি ও আধুনিক গানও করেন হেনরি তালুকদার। তারা ৩ ভাই ও ৩ বোন। তার স্বামী মো. শামীম তালুকদার লাবু একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। সংসার জীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জননী।

প্রসঙ্গত, এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৭১৯ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ৭৮৪ জন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ১০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে, জান্নাত আরা হেনরী (নৌকা) পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৪১৭ ভোট, এবং রুমানা মাহমুদ (ধানের শীষ) ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে রুমানা মাহমুদ (ধানের শীষ) পেয়েছিলেন ১৩ হাজার ৭৭৮ এবং ডা. হাবিবে মিল্লাত (নৌকা) ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ ও সলঙ্গা আংশিক) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ডা. মো. আব্দুল আজিজ। তিনি এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জয়লাভ করেন অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ। তিনি পেশায় একজন ডাক্তার এনং শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি কাজ, রাজনৈতিক প্রোগ্রাম বা জনসভাতেও এলাকার শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাই আব্দুল আজিজ জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধি ডাক্তার হিসেবে পরিচিত। তিনি তাড়াশ উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

তিনি চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাকড়শোন গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬৩ সালের ১৩ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জহির উদ্দিন ও মাতার নাম মোসা. রমিজা জহির। তার সহধর্মিণী ডা. হাফিজা সুলতানা। আব্দুল আজিজ বাংলাদেশ বিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন এবং ৫ ডিসেম্বর ১৯৮৯ থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি মাকড়শোন ও বিনোদপুরে দুটি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি মাকড়শোন গ্রামে জহির উদ্দিন বিজ্ঞান ও কারিগরি স্কুল ও কলেজ স্থাপন করেছেন।

প্রসঙ্গত, এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ৪৬৩ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৬ হাজার ৩৭৫ এবং তৃতীয় লিঙ্গের দুই জন। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মোট সাত জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এদের সবাইকে পরাজিত করে নৌকার প্রার্থী ডা. আব্দুল আজিজ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান। গত ৬ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নিয়মানুসারে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

গাজী শফিকুল ইসলাম শফি ১৯৯০ সালে উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। নবম সংসদে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের ৯ আগস্ট সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৭ হাজার ১৪৮, নারী ভোটার ২ লাখ ১৬ হাজার ২৮৪ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার পাঁচ জন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন মোট চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে এম আকবর আলী (ধানের শীষ) প্রতীক পেয়েছিলেন এবং মো. শফিকুল ইসলাম (নৌকা) ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী তানভীর ইমাম সবাইকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তানভীর ইমাম (নৌকা) পান ৩ লাখ ৩ হাজার ৭০৬ ভোট ও রফিকুল ইসলাম খান (ধানের শীষ) পান ২৪ হাজার ৮৯৩ ভোট।

সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি ও চৌহালি) আসনটি তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ দুটি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত চৌহালি ও বেলকুচি উপজেলা পৃথক আসন ছিল। তখন সিরাজগঞ্জ-৬ ছিল চৌহালি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বেলকুচি ও চৌহালিকে একত্রিত করে সিরাজগঞ্জ-৫ আসন হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আসনটি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রয়াত আব্দুল মজিদ মন্ডলের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল। তিনি বিশিষ্ট শিল্পপতি ও মন্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিআইপি পদকপ্রাপ্ত। তিনি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তার পিতা বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল মজিদ মন্ডল। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমানকে পরাজিত করে এমপি হন।

প্রসঙ্গত, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ৩৮১ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৮০ জন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন মোট চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে জয়ী হন নৌকার প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। এরপর ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মোট ছয় জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত আব্দুল মমিন মন্ডল। নির্বাচনে মমিন মন্ডল (নৌকা) পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬১ ভোট ও মো. আমিরুল ইসলাম খান (ধানের শীষ) পান ২৮ হাজার ৩১৭ ভোট।

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চয়ন ইসলাম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, রপ্তানি শিল্প উদ্যোক্তা ও সফল শিল্পপতি, ফোকলোর আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও গ্রন্থকার প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামের ছেলে।

চয়ন ইসলাম ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতির নেতৃত্বে উঠে আসেন এবং সফলতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের এবং পরবর্তীতে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯১ সালে শাহজাদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে দলকে সংগঠিত করে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান। পরে শাহজাদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ঐ বছরেই জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে ব্যাপক ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও ৯ম জাতীয় সংসদে ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য’ মনোনীত হন।

চয়ন ইসলাম সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত শাহজাদপুর উপজেলার চরনবীপুর গ্রামে ১৯৬১ সালের ১৬ নভেম্বর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার চাচা লুৎফর রহমান শাহজাদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। আরেক চাচা ড. আব্দুল খালেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। অপর চাচা মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম সাবেক সচিব বর্তমানে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। তারা দুই ভাই ও দুই বোন। তার এক বোন প্রফেসর মেরিনা জাহান এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য। আরেক বোন ড. ছন্দ ইসলাম আমেরিকার ম্যারে স্টেট ইউনির্ভাসিটির অধ্যাপক। এক ভাই শাহজাদপুর আসনের সাবেক এমপি বিশিষ্ট সমাজসেবক শিল্পপতি চয়ন ইসলাম ও অপর ভাই শোভন ইসলাম কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং শিল্পপতি।

প্রসঙ্গত এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৯জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৮৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ২৪ হাজার ২০৩ জন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন মোট চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের চয়ন ইসলাম। এরপর ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মোট ছয় জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসিবুর রহমান স্বপন।

৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলার ৬টি আসনে বর্তমানে মোট ভোটার ২৫ লাখ ১২ হাজার ১১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ৬৯ হাজার ৬১০ জন ও নারী ভোটার রয়েছেন ১২ লাখ ৪২ হাজার ৪৮১ জন। এ ছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১৯ জন।