দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবহেলিত সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের উন্নয়নের স্বার্থে বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুলকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করলেন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত চারজন প্রার্থী।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার মেঘুল্লা গ্রামে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের বাসায় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি।

এ সময় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আশানুর বিশ্বাস, পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা, বেলকুচি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দ।

মত বিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম সাজেদুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান মাখন, ইউপি চেয়ারম্যান সোনিয়া সবুর আকন্দ, ফজলুল হক ভাসানী, ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা মোঃ সোলায়মান, ইউপি চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লাজুক বিশ্বাস, ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জাহিদ প্রমুখ। এছাড়াও নির্বাচনী বেলকুচি-এনায়েতপুর-চৌহালী আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আজ মঙ্গলবার বেলকুচি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন নূরুল ইসলাম সাজেদুল। এর আগে বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ বরাবর একটি পদত্যাগপত্র পাঠান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানব বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাজেদুল। পদত্যাগ করেই তিনি গণসংযোগ নেমেছেন।

মতবিনিময় সভায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী নুরুল ইসলাম সাজেদুল বলেন, সিরাজগঞ্জ-৫ অবহেলিত বেলকুচি-চৌহালীর উন্নয়নের স্বার্থেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এ আসনের বর্তমান এমপি কোনো উন্নয়ন করেননি। তিনি সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এ কারণে উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ, নেতাকর্মীর দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’ নানা উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়া এ উপজেলাকে স্মার্ট, মডেল ও সন্ত্রাসমুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে আমার জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত আছি। আশা করি উপজেলা নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনেও অমি বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ।

এর আগে গত ২৬ আগস্ট সিরাজগঞ্জ-৫ নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন বেলকুচি উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আব্দুল মমিন মন্ডল।

নূরুল ইসলাম সাজেদুল ২০১৯ সালের ১০ মার্চ দেশের প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর সিরাজুল ইসলাম। এ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েই বেলকুচি উপজেলাকে মডেল উপজেলা পরিষদে পরিণত করতে দিনরাত কাজ করেছেন। শুধু তাই নয়, উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ সকল প্রকার উন্নয়নে তিনি নিবেদিত হয়ে কাজ করেছেন। বিশেষ করে মহামারি করোনার সংকটের সময় অনেক জনপ্রতিনিধি ঘরে বসে থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেলকুচি উপজেলার কর্মহীন, অসহায়-দরিদ্র মানুষের পাশে থেকেছেন চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল। সমাজের যেসব মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, কিন্তু লোক লজ্জায় কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারেননি তাদেরও গোপনে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সাজেদুল।

প্রসঙ্গত, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ৩৮১ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৮০ জন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন মোট চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে জয়ী হন নৌকার প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। এরপর ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মোট ছয় জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত আব্দুল মমিন মন্ডল। নির্বাচনে মমিন মন্ডল (নৌকা) পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬১ ভোট ও মো. আমিরুল ইসলাম খান (ধানের শীষ) পান ২৮ হাজার ৩১৭ ভোট।