যমুনা নদীতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণকাজ। জাপান ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুর প্রায় ২.৫ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে বসানো হয়েছে ২৫ টি স্প্যান। এছাড়াও টাঙ্গাইল অংশে এপ্রোচ রেলপথ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ আর সিরাজগঞ্জ অংশে শেষ হয়েছে ৭৫ শতাংশ।এখন পর্যন্ত সেতুর সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডাবল ট্র্যাকের ডুয়েল গেজের এই রেল সেতুটির মোট ৫০টি পিলারের মধ্যে যমুনা নদীর পূর্বপাড় টাঙ্গাইল অংশে ২৭টি এবং পশ্চিমপাড় সিরাজগঞ্জ অংশে ৯টি পিলারসহ মোট ৩৬টি পিলারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আর ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে দু’পাড়ে বসানো হয়েছে ২৫টি স্প্যান। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল অংশে স্প্যানের ওপর সরাসরি বসানো হয়েছে রেললাইনের সংযোগ সড়ক।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সরজমিনে গিয়ে প্রকল্প এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে নদীর দু‘প্রান্তে সারি সারি ক্রেন। দেশি, বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে রাত-দিন মিলে কাজ চলছে সমান গতিতে। বড় বড় ক্রেনের সাহায্যে সেতুর বাকি কয়েকটি পাইলিং এর কাজ চলমান রয়েছে। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ এ রেল সেতুর মোট ৫০টি পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩৬টি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়।
তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন যাত্রীবাহী ও মালবাহী প্রায় ৪০টি ট্রেন ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। এর ফলে বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এমন সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর উপর আলাদা একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেতুটি নির্মিত হলে ঘন্টায় ১শ থেকে ১শ ২০ কিলোমিটার গতিতে সব ধরনের ভারী মালবাহী ট্রেনসহ প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড.কে.এম হোসেন আলী হাসান দৈনিক কলম সৈনিক পত্রিকা কে জানান, বঙ্গবন্ধু রেল সেতুকে ঘিরে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে গড়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জ ইকোনোমিক জোন, বিসিক শিল্প পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল। ওই সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি,বিদেশী ব্যবসায়ীরা বিনোয়োগ করার আশা প্রকাশ করেছেন ও সেখানে হাজার হাজার শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। সেখানকার মালামাল যাতায়াত ও ব্যবসা বানিজ্যর সুবিধার্থে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে।সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সূর্য বলেন বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু উপর দিয়ে রেল চলাচলে অনেক সময় লাগে। যমুনার ওপর এই রেলসেতুটি নির্মাণ হলে একদিকে যেমন উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থা নব দিগন্তের সূচনা হবে, অন্যদিকে খুলবে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ‘প্রকল্প পরিচালক’ আল ফাত্তাহ মোঃ মাসুদুর রহমান দৈনিক কলম সৈনিককে জানান, মোট ৫০টি পিলার আর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতু। ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আনা বিশেষভাবে তৈরি মরিচারোধী বড় বড় স্টিলের কাঠামো দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সেতুর স্প্যান। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে দেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার হচ্ছে জাপানি আধুনিক ডাইরেক্ট রেল ফ্যাসেনার প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে স্প্যানের ওপর সরাসরি বসানো হচ্ছে রেললাইন। এতে সেতুর ওপর রেল লাইনের স্থায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি কমবে রক্ষণাবেক্ষণ খরচও। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের রেল সেতুর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মান কাজ নিদিষ্ট সময়ে শেষ হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য,২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনর্ফারেন্সের মাধ্যমে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রেল সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। জাপান এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে রেল সেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাইকা। ২০২৪ সালের আগস্টে এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।