আওয়াবিন শব্দটি ফার্সি। এটি ‘আওয়াব’ শব্দ থেকে নির্গত। আভিধানিক অর্থ হলো খোদাভীরু। ইসলামি পরিভাষায় মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজ আদায়ের পর যে নফল নামাজ পড়া হয় তাকে আওয়াবিন নামাজ বলে। মাগরিবের নামাজের পর আওয়াবিনের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং এশার আগ পর্যন্ত তার সময় বাকি থাকে। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাগরিবের নামাজ শেষ করার পর থেকে এশার নামাজের সময় হওয়া পর্যন্ত যে নামাজ পড়া হয় তাকে সালাতুল আওয়াবিন বলে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫৯২২)

ইবনুল মুনকাদির এবং আবু হাযেম বলেন, সুরা সাজদার ১৬ নং আয়াত (তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- যে নামাজ মাগরিব ও এশার মাঝখানে পড়া হয়। সেটা হলো আওয়াবিনের নামাজ। (শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকি: ২৮৪০, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকি: ৪৮১৩)

সালাতুল আওয়াবিনের রাকাতসংখ্যা নির্ধারিত নয়। ছয় রাকাত আওয়াবিন নামাজের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। অবশ্য এর চেয়ে কমবেশিও করা যাবে। হজরত হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে মাগরিব নামাজ আদায় করলেন। ফরজ শেষে তিনি নফল পড়তে লাগলেন এশা পর্যন্ত। (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১১৯৪)

কিছু ওলামায়ে কেরামের মতে, মাগরিবের ফরজের পরই আওয়াবিনের সময় শুরু হয়। সেই হিসেবে মাগরিবের ফরজের পর দুই রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদাসহ সর্বমোট ছয় রাকাত পড়ার দ্বারা আওয়াবিন পড়ার সওয়াব পেয়ে যাবে। তবে দুই রাকাত সুন্নত পড়ার পর ছয় রাকাত আওয়াবিন পড়াই শ্রেয়।

সালফে সালেহিনরা আওয়াবিন নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করতেন। এই নামাজের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নামাজ মাগরিবের পর পড়বে, যার মাঝে আল্লাহর জিকির ছাড়া কোনো কথা বলে না, তাহলে সে ১২ বছর ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১১৯৫)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়ে, যার মাঝে কোনো মন্দ কথা বলে না, তাহলে সে ১২ বছরের ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। (সুনানে তিরমিজি: ৪৩৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৭৪)

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় ফেরেশতাগণ ওই লোকদের ঘিরে রাখেন, যারা মাগরিব ও এশার মাঝখানে নামাজ পড়ে। আর এটা হলো সালাতুল আওয়াবিন। (শরহুস সুন্নাহ লিলবাগাবি: ৮৯৭)

হাদিসে আওয়াবিনের নামাজ সর্বোচ্চ ২০ রাকাত পর্যন্ত পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। আওয়াবিন নামাজে পড়ার বিশেষ কোনো সুরা নেই। (মাজমাউল আনহুর: ১/১৯৫, তিরমিজি: ৪৩৫, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৩/১৫৫)